কোবানীর বীর কন্যা তোমাদের লাল সালাম! - আশফাক স্বপন

কোবানীর বীর কন্যা তোমাদের লাল সালাম!




(মা,খালা, খালাত বোন, আদরের দুই বোন, বান্ধবী, বন্ধুপত্নী – এত অজস্র নারীর ভালোবাসায় আমি ধন্য, যে নারী নির্যাতন আমাকে বিশেষভাবে পীড়িত করে।  ভাবতে অবাক লাগে, মানবসমাজের এত উন্নতির পরও পুরুষতান্ত্রিকতার সিন্দাবাদের ভূত আজো দূর হলো না।  দুঃখ, কষ্ট, বঞ্চনা, লাঞ্ছনার অজস্র গল্প আছে সেকথা সত্যি, তবে আজ শুনব এক নারীগোষ্ঠীর বীরগাঁথা – তবে সেটা বহুদিন আগেকার গল্প নয়, আমাদের সাম্প্রতিক কালের ঘটনা।  মার্কিন দেশের National Public Radio-এর একটা  প্রতিবেদনের বাংলা অনুবাদ নিবেদন করছি।  মূল ইংরেজির অনুলিখন ও অডিও লিঙ্ক একেবারে নীচে।
আন্তর্জাতিক নারীদিবসে বিশ্বের সব নারীর স্বাধীকার আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করি, তাঁদের প্রতি রইল গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।)
সিরিয়ার খবর মানেই যুদ্ধ, হানাহানি, হিংস্রতার মর্মান্তিক সব সংবাদ।  অথচ একটি নতুন বইয়ের মূল কাহিনি সিরিয়া আর যুদ্ধ নিয়ে হলেও নারীর শৌর্য আর বীরত্বের এমন একটা গল্প যা আমাদের মনকে চাঙ্গা করে, মনে আশা জাগায়।
নতুন বইটির নাম The Daughters of Kobani:`A Story of Rebellion, Courage and Justice (কোবানিকন্যা: বিদ্রোহ, সাহস আর ইনসাফ-এর গল্প)।  বইটি ISIS-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্পূর্ণ নারীগঠিত এক মিলিশিয়া নিয়ে।  এক দল নারী কি করে ঠিক করল যে তারা এমন এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়বে যারা নারীধর্ষণ করে, নারীদের ওপর দাসত্ব আরোপ করে – এটা সেই কাহিনি।
লেখিকা গেইল জেমাখ লেমন (Gayle Tzemach Lemmon)  Council on Foreign Relations-এর  adjunct senior fellow এবং Ashley’s War (এ্যাশলির যুদ্ধ) বইয়ের এর লেখিকা।  নারীর সমানাধিকারের লড়াইয়ের গল্প নিয়ে তার সাম্প্রতিকতম বইটি নিয়ে তিনি -NPR-এর সাথে কথা বলেন।
প্রশ্ন: কী করে এই কাহিনির প্রতি আকৃষ্ট হলেন?
লেখিকা: ফোন বেজে ওঠার পর দেখি সেনাবাহিনীর এক সদস্যা আমাকে ফোন করেছে।  আমার এর আগের বইটি সম্পূর্ণ নারীসদস্যে গঠিত একটি বিশেষ তৎপরতার দল বা special-operations team ।নিয়ে।  এই সদস্যার কথা সেই বইয়ে আছে।  সে আমায় বলল – ‘গেইল, তোমাকে সিরিয়াতে আসতেই হবে।  এসে দেখ কী সব কাণ্ড হচ্ছে এখানে।  এখানে মেয়েরা ISIS-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে।  এরা যুদ্ধক্ষেত্রে পুরুষের নেতৃত্ব দিচ্ছে।  মার্কিন সেনারা এদের প্রচণ্ড সমীহ করে।  যেসব পুরুষ মেয়ে কেনা-বেচা করেছে তাদের ঠেকাবার লড়াইয়ে তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে।  আর তারা যে শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে অবদান রাখছে তাই নয় – তারা মেয়েদের সমান অধিকারের জন্যও লড়ছে।
বইটির শিরোনামের অর্থ কি?
সিরিয়ার উত্তরপূর্বে ছোট্ট এক শহর কোবানি।  সিরিয়ার বাইরে কেউ এর নাম কখনো শুনেছে কিনা সন্দেহ।  ইসলামিক রাষ্ট্রের পুরুষেরা যখন ভাবল তারা অতি সহজে এই  শহরকে পদানত করে যুদ্ধক্ষেত্রে আরেকটি বিজয় সূচিত করবে, তখন শহরটা আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল।  কারণ বছরটি ২০১৪ আর আইসিস এর আগে একটিবারের জন্যও পরাজিত হয়নি।  এইরকম একটা সময় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো যাতে মানুষের কল্পনায় এটা বাইবেলের ডেভিড আর গোলায়াথের লড়াইয়ের মতো মনে হলো।  একদিকে মহাপরাক্রান্ত দৈত্য গোলায়াথ, আরেক দিকে সামান্য, সাধারণ ডেভিড।   সিরিয়ার একটি কুর্দী বাহিনী, হয়ত এদিক ওদিক খানিকটা সাহায্য পেয়েছে, এর মধ্যে ইরাকি কুর্দী যোদ্ধারাও মদদ দিচ্ছে – এরা সবাই ঠিক করেছে ইসলামিক রাষ্ট্রকে ঠেকাতে আমরণ লড়াই করবে – আর এই যুদ্ধে কেন্দ্রীয় ভূমিকা হচ্ছে নারীদের।  এ যেন ডেভিড আর গোলায়াথের লড়াই।  শুধু ডেভিড এখানে নারী।
একটি অন্যতম প্রধান চরিত্রের – ইনি একজন তরুণী - আইসিস যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তার পরিবারের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
শ্রোতারা অনেকেই জানেন অনেক সময় তরুণীরা পারিবারিক বাধার সম্মুখীন হয়।  তার বেলায় পরিবারের গুরুতর বাধা ছিল।  তার শখ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবে, তার চাচা দিলেন সেটা নাকচ করে।  মেয়েটা একজনকে ভালোবেসেছিল, তাকে বিয়ে করতে  চেয়েছিল, কিন্তু সেটা করতে দেওয়া হলো না।  আস্তে আস্তে সে এমন একটা সামাজিক জগতে প্রবেশ করে যেখানে মেয়েরা নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।  সেই যুদ্ধের সাথে ইসলামিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।  আমরা পাঠক হিসেবে দেখি আমাদের চোখের সামনে সে কি করে বদলে যায়।  সে ছিল একজন সহকারী, গাড়িতে করে যখন পাওয়া যেত তখন গোলাবারুদ সরবরাহ করত।  তাও খুব ঘন ঘন নয়।  সেখান থেকে পরে সে আইসিস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নারী পুরুষের নেতৃত্ব দিয়েছে।  আমার মনে হয় বহু নারীকে এই পথটুকু পেরোতে হয়েছে – যাত্রার শুরুতে মানুষ তাদের না করেছে, পরে নিজ চেষ্টায় সেই না তারা কে হ্যাঁ-তে পরিণত করেছে।  আমার তো মনে হয় মেয়েটাও ঠিক তাই করেছে।
তারা আইসিস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করবার সিদ্ধান্ত কীভাবে নিল?
নারী কেনা-বেচা আইসিস-এর পুরুষেদের কর্মকাণ্ড ও চরিত্রের একটি মূল অংশ ছিল।  তো ধরুন এরা এসে আপনার পাড়ায় হাজির  আসলে আইসিস সৃষ্টির বহু আগেই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের অরাজকতার তাণ্ডবের মধ্যে এই সব নারী মাঠে নেমেছে তাদের নিজ নিজ শহর, গৃহকোণ, পাড়াকে রক্ষা করতে।  সেখান থেকেই ব্যাপারটা ইসলামিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রূপ নেয়।  অনেকের জন্য দুটো পথ মাত্র খোলা ছিল – হয় কারো সম্পত্তি হয়ে যাও, বা জবরদস্তি বিয়েতে রাজি হও, নয়তো পুরুষকে সরাসরি প্রতিহত করো।  এটা এমন একটা সময় যখন বহু নারী যেই সব নিয়ম তাদের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলো ঢেলে সাজাচ্ছে, এই সব নারী ঠিক এই কাজটিই করেছে। 
এই সব নারী কী তাদের গল্প বলতে আগ্রহী ছিল?
এদের কেউই কিন্তু মনে করেনা তারা এমন আহামরি কিছু করেছে।  ওরা আমার সাথে ঠাট্টা করে বলত, ‘আরে গেইল, তোমার কবে কাজ শেষ হবে? আর কতবার আমাদের সাথে এসে দেখা করবে? এই বইটা সত্যি সত্যি কবে বেরুবে বলতো?’  একবার একটা ঘটনায় বুঝলাম এই বিষয়টি নিয়ে একটা বই লিখতে হবে।  রোজদা বলে এক নেত্রীকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা, তোমরা নারী রক্ষী দলের ইউনিট গড়লে কেন?’ ও আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলল, ‘আমরা আইসিসকে কিছুতেই দাঁড়াতে দেবনা – জানোতো ওরা মেয়েদের কী দশা করেছে।  আর পুরুষমানুষ আমাদের কাজের জন্য বাহবা কুড়াবে, সেটাও আমরা চাইনি।‘ শুনে আমি ভেবেছিলাম – এইতো সারা বিশ্বের একটা চিরন্তন গল্প।।
আইসিস-কে পরাস্তকারী বীর নারী যোদ্ধা হবার ফলে তাদের মনে কি গভীর সন্তোষ ছিল?
একটা মুহূর্ত এসেছিল যখন প্রথমবারের মতো আইসিস পরাজয়ের সম্মুখীন।  মেয়েরা তখন কোবানিতে প্রাণপণ যুদ্ধ করছে।  যুদ্ধের রসদ বাড়ন্ত, লোকবল কম।  খাবারের অভাব।  যেটার অভাব নেই সেটা হলো তেজ আর মনোবল।  এক নারী নেত্রী যোদ্ধাদের বলছিলেন, ‘ওরা তোমাদের কী মনে করে সেটা মনে রেখো। ওদের দেখিয়ে দাও তোমাদের কী ক্ষমতা, বুঝিয়ে দাও মেয়েদের দাম আছে, মেয়েদের দাসী করা যায় না, এই অন্যায় চলবে না। ’ ওরা আমার কাছে যত কথা বলেছে, সব কিছুর ভেতর এই চিন্তাটা কাজ করেছে – এটা শুধু তাদের নিজেদের জন্য লড়াই না, সেই অঞ্চল এবন্ত তার বাইরে সব নারীর জন্য এই লড়াই।
ওরা এখন কী করছে?
যেটা সবচাইতে তাজ্জব ব্যাপার, এই যে সব মানুষগুলোর সাথে আমাদের পরিচয় হয় – কোবানির কন্যারা – তাদের নিজ নিজ পরিবারের ভেতরেও অগ্রযাত্রা ঘটে।  রোসজা বলে এক মেয়ের যখন ছোট্ট বয়স, তখন তার চাচা ভূত সেজে তাকে ভয় দেখিয়েছিল যাতে সে ভাইয়ের সাথে ফুটবল না খেলে, কারণ মেয়েরা ফুটবল খেললে পরিবারের বেইজ্জতি হয়।  আজ সেই চাচাই তাকে ফোন করে নানান বিষয়ে বুদ্ধি-পরামর্শ চান, পারিবারিক ঝগড়া মীমাংসায় তার সাহায্য চান।  এই যে একটা ধারণা, যেই অর্জন চোখের সামনে দেখা যায়, সেই অর্জন প্রত্যেক মেয়ের নাগালের মধ্যে, মেয়েদের নেতৃত্ব দেবার ধারণাটাই সারা অঞ্চলের মর্মে প্রবেশ করেছে।  একথা মানতে হবে যে কাজ এখনো বাকি, ত্রুটি বিচ্যুতিও রয়েছে, তবে এইখানে যা দেখছি, এমনটি আমি আর কোত্থাও দেখিনি – পৃথিবীর বহু জায়গা দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। 

ডিজিটাল যুগে বাংলা: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা - আশফাক স্বপন

ডিজিটাল যুগে বাংলা: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

আশফাক স্বপন

ডেইলি স্টারএকুশে ক্রোড়পত্র, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১






 

প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি এলে আমরা ১৯৫২-এর ভাষা শহিদদেরকাছে আরেকবার প্রতিজ্ঞা করি যে আমরা আমাদের প্রিয় ভাষা বাংলারবিকাশ সুনিশ্চিত করব।  এই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে হলে একটা গুরুত্বপূর্ণকথা আমাদের মনে রাখতে হবে।  একটি ভাষা ভবিষ্যতে টিকে থাকবেকিনা সেটা নির্ভর করে যুগের নবতর প্রযুক্তির সাথে সেই ভাষা কতখানিতাল মিলিয়ে চলে

বাংলা ভাষার ভবিষ্যত কিআমরা কি সুনিশ্চিত হতে পারি যেডিজিটাল যুগে বাংলা শুধু টিকবে নাতার উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে?

ডিজিটাল যুগে যেম অপার সম্ভাবনা রয়েছেতেমন কঠিন চ্যালেঞ্জওরয়েছে।  একটি ভাষার বিকাশে জটিল সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণথাকে।  তবে তারপরও এমন কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত সে যখন নতুনপ্রযুক্তি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। 

জার্মান মুদ্রণশিল্পী ইয়োহানাস গুটেনবার্গের কথা ধরা যাক।  তিনি১৪৫০ সালে সরণশীল ছাপার হরফ আবিষ্কার করে নতুন যুগের সৃষ্টিকরেন।  মুদ্রিত বইপত্র মানুষের হাতে কীভাবে পৌঁছুতে পারে সেটারাতারাতি পালটে গেল।  বইসাময়িকীএসব এককালে হস্তাক্ষর শিল্পীরকারবার ছিল – তার প্রসার স্বল্পসংখ্যক উঁচুতলার মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধছিল  ছাপাখানায় প্রকাশনা শুরু হবার সাথে সাথে মানুষেরচিন্তাভাবনার প্রসার শতগুণ বৃদ্ধি পেল

বাংলা ভাষাকে ছাপার অক্ষরের জন্য সাড়ে তিন শতাব্দী অপেক্ষা করতেহয়।  আঠার শতকে খ্রীষ্টান মিশনারিদের হাতে বাংলা ভাষায় ছাপারসূচনা হয়। ঐ সময়ে ইউরোপীয়দের সংস্পর্শে আসার ফলে উচ্চবর্ণেরহিন্দু ভদ্রলোক সমাজে গভীর বৌদ্ধিক জাগরণ হয়।  কলকাতায় ফোর্টউইলিয়াম কলেজ-এর পত্তনবই আর পত্রপত্রিকার মাধ্যমেচিন্তাভাবনার আদানপ্রদানের যে নতুন সংস্কৃতি তৈরি হলোএমনপরিবেশেই আধুনিক বাংলার জন্ম।  বাংলা ভাষার নবজন্মে নানানবিষয়ের প্রভাব ছিলতবে মুদ্রণের সূচনা যে তার মৌলিক কারণএবিষয়েসন্দেহ নেই

এবার চলে আসুন বিংশ শতাব্দীর শেষ কয়েকটা দশকে।  ডিজিটাল যুগপ্রযুক্তির আরেকটি যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে যার ফলে বিশ্বসংস্কৃতিরচেহারাটাই পালটে যায়।  ডিজিটাল প্রযুক্তি আর ইন্টারনেট ভাষা আরযোগাযোগে বিপ্লব সাধন করে।  এর সবচাইতে বড় অবদান হলো এরফলে ছাপার অক্ষর সবার কাছে অবারিত হয়ে যায়।  এককালে শুধু যারাটাইপ করতে পারতছাপার অক্ষর শুধু তাদের নাগালে ছিল।  এখনপ্রথম শ্রেণির একটা স্কুলের ছাত্রীও বাড়িতে ল্যাপটপে বাড়ির কাজ টাইপকরতে পারে

আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে ডিজিটাল বিপ্লব ছড়াতে লাগল।  তখন একটাউদ্বেগজনক বিষয় দেখা গেল – ভাষায় ভাষায় বৈষম্য রয়েছে।  ধনীপ্রযুক্তি-প্রাগ্রসর দেশে ভাষা চট করে ডিজিটাল পরিবর্তন আত্মস্থ করেফেললকিন্তু বাংলা (এবং ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য ভাষাপেছনে পড়ে যেতে লাগল।  বাংলাকে যদিও ছাপাখানার মতো অতদিনঅপেক্ষা করতে হয়নিতবুও ডিজিটাল যুগে বাংলা একটু দেরিতেই প্রবেশকরে।  গোড়াতেই বাংলা ভাষাকে কিছু কঠিন সমস্যার মোকাবেলা করতেহয়।  প্রথমত কম্পিউটারে টাইপ করবার মত সহজে ব্যবহার্য কোনওয়ার্ড-প্রসেসর সফটওয়্যারের অভাব ছিল।  ফলে বাংলায় টাইপ করাইকঠিন হয়ে উঠল। (এর ফলে এক বিশ্রী প্রবণতা চালু হল – রোমানহরফে বাংলা লেখাঅর্থাৎ banglish)।  গোড়াতে বাংলা সফটওয়্যারতৈরির কয়েকটি উদ্যোগ হয়েছেকিন্তু তাতে কেমন যেন পেশাদারিত্বেরঅভাব ছিল। 

ইন্টার্নেটে ওয়েব-এর আগমনে নতুন সমস্যা দেখা দিল।  বাংলা হরফেরকোন প্রমিত ডিজিটাল রীতি না থাকায় একেক ওয়েব পেজ-এ একেকভাবে বাংলা লেখা প্রদর্শিত হলো – ফলে সেটা আরেক কম্পিউটারেহিজিবিজি হরফ হয়ে দেখা দিতে লাগল।  মরিয়া হয়ে কোন কোন ওয়েবপাতার ডিজাইনার বাংলা হরফ গ্রাফিক ফাইলে বদলে দিলেন।  ফলেবাংলাভাষায় ওয়েবে অনুসন্ধান অসম্ভব হয়ে উঠল

সেই সব দিন পেছনে ফেলে আজ বাংলা অনেক এগিয়ে এসেছে।  আজকম্পিউটারে বাংলার ব্যবহার সর্বজনীন – সেদিক দিয়ে বাংলার অবস্থানবিশ্বের যে কোন উন্নত দেশের ভাষার সাথে তুলনীয়।  গোড়ার দিনগুলোরপ্রতিকুলতা বিবেচনা করলে এটা একটা বিশাল অর্জন।  এই অর্জনেরপেছনে একটা অদ্ভুত মজার গল্প আছে।  বাংলাদেশে সরকারি অফিসেবাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বজনীন বলেই দেশে একটা বাংলা ওয়ার্ড-প্রসেসিং সফটওয়্যারের প্রয়োজনীয়তা সবচাইতে বেশি অনুভূত হয়।  কিছু অসফল উদ্যোগের পর বিজয় সফটওয়্যার বেশ জাঁকিয়ে বসে।   এই সফটওয়্যার বাংলা প্রকাশনায় প্রমিত সফটওয়্যার হয়ে ওঠে এবংআজও এটি সেই অবস্থানে অধিষ্ঠিত।  তবে কম্পিউটারে বাংলারসর্বজনীন ব্যবহার সুদূর পরাহত রয়ে গেল – কারণ বিজয়সফটওয়্যারের একটা সীমাবদ্ধতা ছিল  সেটা হলো বিজয়-এর নিজেরআলাদা বাংলা কীবোর্ড রয়েছে।  এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে বাংলাটাইপ করতে হলে ব্যবহারকারীকে সেই বাংলা কীবোর্ড ব্যবহার আয়ত্তকরতে হয়।  অর্থাৎ কম্পিউটারের রোমান QWERTY রোমান হরফেরকীবোর্ড ছাড়াও সম্পূর্ণ আলাদা আরেকটা কীবোর্ড শিখতে হবে

এর ফলে পরিস্থিতি এমন হলো যে বিজয় সফটওয়্যার বাংলাকেডিজিটাল যুগে নিয়ে এলো ঠিকইকিন্তু এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাবহয়ে গেল পশ্চাদমুখী।  সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারী আলাদাবাংলা কীবোর্ড শেখার ঝক্কি পোয়াতে রাজি নয়।  শুধুমাত্র যাদের পেশারদায় রয়েছে – টাইপিস্ট ও মুদ্রণশিল্পের সাথে জড়িত মানুষ – এরাই বিজয়সফটওয়্যার আয়ত্ত করল।  ফলে বাংলা যেন পুরনো জমানাতে রয়ে গেলছাপার অক্ষর শুধু তাদেরই নাগালের মধ্যে রয়ে গেল যারা হয় টাইপকরতে পারে নতুবা টাইপ বসাতে পারে

এই বিশাল ফাঁক পূরণের জন্য কিছুদিনের মধ্যেই এক অপূর্ব নতুন বাংলাসফটওয়্যারের অভ্যুদয় ঘটল।  আজ যে কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহারসর্বজনীন হয়েছেতার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব পাওনা এই অভ্র বাংলাসফটওয়্যারের।  অভ্রের বাজিমাতের কারণ এটি চীনাজাপানি বাকোরিয়ান ভাষার ওয়ার্ড-প্রোসেসিং সফটওয়্যারের কৌশল বাংলায়প্রয়োগ করে।  এই সব ভাষার সফটওয়্যার ঊদ্ভাবনায় এক বিরাট সমস্যাদেখা দিয়েছিল।  যেমন চীনা বা জাপানি ভাষায় সহস্রাধিক হরফ।  এতহরফ কী করে কীবোর্ড সামাল দেবেসফটওয়্যার গবেষকরা একটাদারুণ উপায় বের করলেন। আচ্ছাকীবোর্ডের এক একটা বোতাম দিয়েহরফ টাইপ করবার পরিবর্তে QWERTY কীবোর্ড ব্যবহার করে সেইশব্দগুলো বানান করলে কেমন হয়?  অর্থাৎ রোমান কীবোর্ডে ভিনভাষার শব্দের ধ্বনি অনুসরণ করে রোমান হরফে বানান করা – ইংরেজিতে যাকে phonetic কীবোর্ড বলে।  এর ফলে আর কম্পিউটারব্যবহারকারীকে আলাদা করে কীবোর্ড আয়ত্ত করতে হবে না।  কম্পিউটার ব্যবহারকারী মাত্রেই QWERTY কীবোর্ডের সাথে পরিচিত। 

একথা সত্যি যে অভ্র-ই প্রথম phonetic বা ধ্বনি-অনুসারী বাংলাসফটওয়্যার নয়।  তবে অভ্র-এর দুটো গুণ তার সাফল্যের চাবিকাঠি।  গোড়া থেকেই এটি বিনামূল্যে লভ্য এবং এর সফটওয়্যার মুক্ত বা open source। অভ্রের উদ্ভাবক গণস্বার্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে সফটওয়্যারের source code অবারিত করে দিয়েছে।  অন্যান্য সফটওয়্যার উদ্ভাবকরাওগণস্বার্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্রমাগত তার ঘষামাজা করেছেন।  এর ফলে এটিআজ একটি অতি সহজনির্ভরযোগ্য সফটওয়্যার হয়ে উঠেছে।  আজএটা উইন্ডোজম্যাক এবং প্রায় সবখানে ব্যবহার করা যায়

বাংলাদেশি হিসেবে আমার গর্ব হয় যে অভ্র সারা পৃথিবীতে বাংলাব্যবহারের সবচাইতে জনপ্রিয় সফটওয়্যার।  (হাতের কাছে পরিসংখ্যাননেইতবে আমার অনুমান এর নিকটতম – এবং বেশ খানিকটা দূরবর্তীপ্রতিদ্বন্দ্বী Google input tools)।  কম্পিউটারে বাংলার সর্বজনীনব্যবহারের ফলে ওয়েবে বাংলার বিশাল রচনা সম্ভার জমা হয়েছে।  বাংলা ফন্ট ব্যবহারে ইউনিকোড প্রমিত মান গ্রহণের ফলে আজবাংলায় অবলীলায় ওয়েব সার্চ করা যায়।  বাংলা উইকিপিডিয়া পাতারতথ্যসম্ভার ক্রমশ আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে। 

তবে একথা মনে রাখতে হবে কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহার সর্বজনীন করাএকটি উপায় মাত্র – আমাদের মূল লক্ষ্য হলো এই অসাধারণশক্তিশালী ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলা প্রকাশনার শ্রীবৃদ্ধিকরে। একথা মানতেই হবে যে সেই ক্ষেত্রে একটা বিশেষ এলাকায় বাংলাহোঁচট খেয়েছেএবং সেটা হলো ই-বই প্রকাশনা।  ই-বই হলো ছাপা বই-এর এমন একটা রূপ যেটা ল্যাপটপট্যাবলেট বা স্মার্ট ফোনে পড়া যায়।  অথবা এ্যামাজন কোম্পানির কিন্ডল যন্ত্রের মতো এমন একটা যন্ত্রসেটা শুধুমাত্র ই-বই পড়ার জন্য তৈরি করা হয়েছেসেটা দিয়ে সেই বইপড়া যায়

আমেরিকান প্রকাশক সমিতির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে২৩৪ মিলিয়ন ই-বই বিক্রি হয়।  (সে বছর সব রকম রূপে বিক্রিত বইয়েরসংখ্যা ১.৮ বিলিয়ন – বিক্রিত ই-বই তার ১৩%) বাংলা প্রকাশনারআজ ঘোর দুর্দিন – বাংলাদেশে গড়পড়তায় একটি বইয়ের মুদ্রণ সংখ্যা৩০০ – ই-বই বাংলা প্রকাশনা মুশকিল আসানে একটা সম্ভাবনাময়উদ্যোগ হতে পারে। (পশ্চিমবঙ্গে প্রকাশনা শিল্প অনেক বেশি শক্তিশালী– তবে শঙ্কা হয় সেখানেও জরা বাসা বাঁধছে।  কয়েক দশক আগেরলেখকরা – যাঁদের কেউ কেউ আজ প্রয়াত – তাদের রচনা এখনোসর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় উপস্থিত দেখে অবাক হই।)

ই-বই প্রকাশনার প্রাথমিক খরচ যৎসামান্যবই গুদামজাত করাপাঠানো বা প্রস্তুতির খরচ নেই বললেই চলেএবং বিশ্বের সর্বত্র সেটাপাঠানো যায়।  একথা ভুললে চলবে না যে বাংলা পাঠক আজসারাবিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্রযুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে তার সংখ্যা আজ বেশ বড়োহয়ে উঠেছে।  অথচ বাংলা প্রকাশনায় ই-বইয়ের অবস্থা ভয়ঙ্কর।  গতবছরের আগ পর্যন্ত ঢাকা অথবা কলকাতার কোন শীর্ষস্থানীয় প্রকাশকই-বই প্রকাশ করেনি।  গত বছর দুই বাংলার শীর্ষস্থানীয় প্রকাশককলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স তার নিজস্ব এ্যাপে বাংলা ই-বইপ্রকাশ শুরু করে।  বাংলাদেশে এক বেঙ্গল ই-বই প্রকাশনার উদ্যোগকিছুদিনের জন্য চালু করে বন্ধ করে দিয়েছে।  এখন বাংলাদেশে একমাত্রআদর্শ পাবলিশার্স ই-বই প্রকাশ করে।  ওদের ওয়েব সাইটে ১৫৭ বইয়েরউল্লেখ আছেতবে ঠিক কতগুলো ই-বই হিসেবে লভ্য সেটা পরিষ্কার নয়।  পশ্চিমবঙ্গে পারুল, গুরচণ্ডা৯ আর সৃষ্টিসুখ নামে কিছু ক্ষুদ্র প্রকাশক ই-বই প্রকাশ করে।  এদের প্রকাশিত ই-বই-এর সংখ্যা খুব বেশি নয়

বাংলা ই-বই কেন এভাবে মুখ থুবড়ে পড়লপাঠকের নিস্পৃহতার কারণেকি বাংলা প্রকাশকরা হতোদ্যম হয়েছেনাকি ই-বইয়ের অভাবে বাংলা ই-বই পড়ার অভ্যাসটাই গড়ে উঠতে পারেনিতাই ই-বইয়ের পাঠকই নেইনাকি বাংলা পাঠকরা বড্ড সেকেলেতাই অনলাইনে বই পড়ার নতুনপ্রযুক্তি গ্রহণে তাদের অনীহা?

এই বিষয়ে সকল সংশয়ের অবসান ঘটিয়েছে ফেসবুক গ্রুপ ‘বইয়েরহাট’। ২০১২ সালে আটলান্টা প্রবাসী এক বইপাগল বাংলাদেশি স্থাপিতএই গ্রুপ আজ বিশ্বজোড়া বাংলা বইপ্রেমীদের পরিবার হয়ে উঠেছে।  বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একদল এডমিন দৈনিক ৫০০ পোস্ট থেকেনির্বাচন করে এই ফেসবুক গ্রুপ দেখাশোনা করেন।  এই গ্রুপেআলোচনার বিষয় একমাত্র বাংলা বই ও বাংলা সাহিত্যআলোচনারভাষাও শুধুমাত্র বাংলা।  গ্রুপটির ১৬৫,০০০ সদস্য পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ এবং বিশ্বের নানান জায়গায় অবস্থিতএরা অনলাইনে৪০,০০০ বই তুলে দিয়েছেন।  এডমিনরা বলেন অজস্র সংখ্যায় বইডাউনলোড হয়তবে বই নামানো হলেই যে পড়া হয় সেকথা অবশ্য বলাযায় না। 

এত বই তুলে দেওয়া কপিরাইটের কারণে উদ্যোগটা যে খানিকটাপ্রশ্নবিদ্ধসেটা বইয়ের হাট-এর সংগঠকরা স্বীকার করেন।  তবে বইয়েরহাট এই উদ্যোগ থেকে একটি পয়সাও গ্রহণ করেনিসুতরাং উদ্যোক্তারাএই কথাটা জোরের সাথে বলতে পারেন যে গোটা উদ্যোগটা পুরোপুরিবাংলা বইয়ের ভালোবাসাপ্রসূতউদ্দেশ্য বাংলা বইয়ের প্রচার বৃদ্ধি।  এইউদ্যোগের ফলে বাংলা বইয়ের প্রতি যে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গিয়েছেমনে হচ্ছে তার ফলে বাংলা বইয়ের প্রকাশকদের সংশয় দূর হয়েছেকারণ দুই বাংলার প্রকাশকদের সাথে বইয়ের হাটের গভীর সুসম্পর্ক।  গতবছর বইয়ের হাট আরেকটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।  বইয়েরহাট আমাজন-এর কিন্ডল-এ বাংলা ই-বই প্রকাশনা শুরু করে।  এরআগে কিছু এলোপাথাড়ি উদ্যোগ চালু হয়েছে বটেকিন্তু বইয়ের হাট এইপ্রথম পেশাদারভাবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করে।  যুক্তরাষ্ট্রে রীতিমতোকোম্পানি নিবন্ধিত করে সেই কোম্পানি আমাজন-এর সাথে ই-বইপ্রকাশের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়লেখক ও প্রকাশকের সাথে সম্মানীরপ্রতিশ্রুতি দিয়ে আলাদা চুক্তি হয়। 

ঢাকা আর কলকাতার ৭০টির বেশি ই-বই আজ অবধি বইয়ের হাটপ্রকাশ করেছে।  সামনের পথ অত্যন্ত কঠিন  - ই-বই বিক্রির সংখ্যা বেশিনয় – মাত্র ৪৫০ বই। 

এতে অবশ্য একটা কথা খুব পরিষ্কার হয়ে যায় - বইয়ের হাট-এর উদ্দেশ্যচট করে টাকা বানানো নয়। বরঞ্চ বইয়ের হাট-এর স্বভাবে বাংলাদেশেরছায়ানট বা বেঙ্গল ফাউন্ডেশন-এর মতো সংগঠনের প্রশংসনীয় প্রবণতালক্ষণীয় – আর্থিক লাভ নয়সংস্কৃতির বিকাশটাই বড়ো কথা।   তবেএখনো সমস্যা আছে।  ভারতে আমাজনে ক্রয় বিক্রয় সম্ভবতবেবাংলাদেশে নয়। সেজন্য বাংলাদেশের আগ্রহীদের অন্য উপায় বেরকরতে হবে।  (এই বইগুলো Google Play-তে লভ্য।) যেটা আরো উষ্মারবিষয়আমাজন গুজরাতি বা হিন্দি ভাষা গ্রহণ করলেও বাংলা গ্রহণকরে নাতাই আমাজনে বাংলা বইয়ের উপস্থিতি কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ

এর ফলে একটা বিষয় পরিষ্কার – বাংলা ই-বইয়ের এখনো অনেক পথবাকি।  তবে পেছন ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পা যে একদিনকম্পিউটার যুগের সাথে তাল মিলাতে বাংলাকে হিমসিম খেতে হয়েছেকিন্তু সেসব ধাক্কা বাংলা ভাষা বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে এটাআমাদের জন্য আশার কথা।  আজ সময়ের প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে বাংলা ই-বইকে বাংলা প্রকাশনার একটি শক্তিশালী অঙ্গহিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা। 

সাহিত্যের কোলে আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ ও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে বইপত্র ও সাময়িকী প্রকাশনার ফলে চিন্তা-ভাবনার যে প্রাণবন্ত আদান-প্রদান হয়সেটিই সাহিত্যের প্রাণশক্তি।  সাহিত্য আমাদের পরিচয় ধারণ করেতাইতার বিকাশে আত্মনিয়োগের মাধ্যমেই আমরা ১৯৫২ সালের শহিদদেরস্মৃতির প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করব

 

 

https://www.thedailystar.net/supplements/news/the-promise-and-challenge-bangla-the-digital-age-2048261

প্রকাশক : রিটন খান, সম্পাদকমন্ডলী : এমরান হোসেন রাসেল, রিটন খান
Copyright © 2020. All rights reserved by বইয়ের হাট