আপনি তুমি রইলে দূরে
রফিক কায়সার
কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে কবি-প্রয়াণের পর থেকেই। তাঁকে নিয়ে কবির জীবৎকালেও ব্যক্তিবিশেষের নেতিবাচক মতামত বা মন্তব্যকে কবি যথেষ্ট গুরুতব দিয়ে খন্ডন করেছেন বা জবাব দিয়েছেন। ব্যক্তিবিশেষের মন্তব্য বা মতামত কবির জীবৎকালে সামাজিক পরিবাদ বা শান্তিনিকেতনে রথীন্দ্রনাথবিরোধী জনমত তীব্রতা পায়নি। কবি-প্রয়াণের পর থেকেই রথীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন নিয়ে শান্তিনিকেতনের বাসিন্দাদের জনরব তৈরি হতে থাকে। তাঁর কনিষ্ঠ সহকর্মী নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী মীরা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রথীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। যৌক্তিক কারণেই রবীন্দ্রনাথের পরিবারের পক্ষ থেকে এই সম্পর্ক নিয়ে কথা ওঠে, তাঁর গোচরে আনা হয় সামাজিক লোকনিন্দার প্রসঙ্গ। এ-প্রসঙ্গে রথীন্দ্রনাথের অবস্থান ছিল নেতিবাচক – তিনি মীরা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে অস্বীকার না করে শান্তিনিকেতন থেকে প্রস্থানকে বিবেচনায় আনেন। ইন্দিরা চৌধুরী সরাসরি রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। বিশ্বভারতীর আচার্য ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কানেও খবরটি পৌঁছে যায়। রথীন্দ্রনাথের ছোট বোন মীরা ঠাকুর প্রথম থেকেই এই সম্পর্ক নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অগ্রজের প্রতি, আবার লুপ্ত করেননি অগ্রজের প্রতি স্বাভাবিক শ্রদ্ধাবোধ। ভ্রাতৃবধূর প্রতি অব্যাহতভাবে জ্ঞাপন করেছে সহমর্মিতা এবং সহানুভূতি। রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে মীরা চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্ক নিয়ে সরাসরি কটাক্ষ করেছেন রথীন্দ্রনাথের ভাগ্নি নন্দিতা।
রথীন্দ্রনাথের সম্পর্ক-বহির্ভূত আচরণ যেমন শান্তিনিকেতনে নিন্দার ঝড় তুলেছিল, তেমনি উপাচার্য হিসেবে তাঁর কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জড়িয়ে পড়েন তহবিল তছরুপের মামলায়। একপর্যায়ে মামলায় হাজিরা দিতেও অনাগ্রহী হয়ে পড়েন রথীন্দ্রনাথ। এই পর্যায়ে সবকিছু ছাপিয়ে মীরা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাজারীবাগে ‘হাওয়া বদল’ করতে যাওয়ার ঘটনা তাঁর পদমর্যাদা এবং ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করে। বিশ্বভারতীর স্থানীয় এবং দিল্লির প্রধানমন্ত্রীর দফতর ঘটনাটিকে সহজভাবে নিতে পারেনি। রবীন্দ্রানুরাগী নেহেরু নিজেও রথীন্দ্রনাথের বিষয়ে বিব্রত হন। প্রশান্ত মহালনবীশকে দিয়ে তাঁর কাছে খবর পাঠানো হলো যে, ‘বার্তা’র সারমর্ম হলো, চট্টোপাধ্যায় দম্পতিকে শান্তিনিকেতন থেকে হটাও। রথীন্দ্রনাথ উল্লিখিত ‘বার্তা’র মর্মার্থ গ্রহণ না করে বেছে নিলেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। অভিমান করে ছেড়ে এলেন শান্তিনিকেতন। সঙ্গে এলেন মীরা চট্টোপাধ্যায়। জীবনের শেষ আট বছর অতিবাহিত করেছেন এই নারীর সান্নিধ্যে – দেরাদুনে। এই ঘটনাক্রম বিশ্বভারতীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছে কমবেশি জানা।
রফিক কায়সার
কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে কবি-প্রয়াণের পর থেকেই। তাঁকে নিয়ে কবির জীবৎকালেও ব্যক্তিবিশেষের নেতিবাচক মতামত বা মন্তব্যকে কবি যথেষ্ট গুরুতব দিয়ে খন্ডন করেছেন বা জবাব দিয়েছেন। ব্যক্তিবিশেষের মন্তব্য বা মতামত কবির জীবৎকালে সামাজিক পরিবাদ বা শান্তিনিকেতনে রথীন্দ্রনাথবিরোধী জনমত তীব্রতা পায়নি। কবি-প্রয়াণের পর থেকেই রথীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন নিয়ে শান্তিনিকেতনের বাসিন্দাদের জনরব তৈরি হতে থাকে। তাঁর কনিষ্ঠ সহকর্মী নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী মীরা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রথীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। যৌক্তিক কারণেই রবীন্দ্রনাথের পরিবারের পক্ষ থেকে এই সম্পর্ক নিয়ে কথা ওঠে, তাঁর গোচরে আনা হয় সামাজিক লোকনিন্দার প্রসঙ্গ। এ-প্রসঙ্গে রথীন্দ্রনাথের অবস্থান ছিল নেতিবাচক – তিনি মীরা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে অস্বীকার না করে শান্তিনিকেতন থেকে প্রস্থানকে বিবেচনায় আনেন। ইন্দিরা চৌধুরী সরাসরি রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। বিশ্বভারতীর আচার্য ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কানেও খবরটি পৌঁছে যায়। রথীন্দ্রনাথের ছোট বোন মীরা ঠাকুর প্রথম থেকেই এই সম্পর্ক নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অগ্রজের প্রতি, আবার লুপ্ত করেননি অগ্রজের প্রতি স্বাভাবিক শ্রদ্ধাবোধ। ভ্রাতৃবধূর প্রতি অব্যাহতভাবে জ্ঞাপন করেছে সহমর্মিতা এবং সহানুভূতি। রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে মীরা চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্ক নিয়ে সরাসরি কটাক্ষ করেছেন রথীন্দ্রনাথের ভাগ্নি নন্দিতা।
রথীন্দ্রনাথের সম্পর্ক-বহির্ভূত আচরণ যেমন শান্তিনিকেতনে নিন্দার ঝড় তুলেছিল, তেমনি উপাচার্য হিসেবে তাঁর কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জড়িয়ে পড়েন তহবিল তছরুপের মামলায়। একপর্যায়ে মামলায় হাজিরা দিতেও অনাগ্রহী হয়ে পড়েন রথীন্দ্রনাথ। এই পর্যায়ে সবকিছু ছাপিয়ে মীরা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাজারীবাগে ‘হাওয়া বদল’ করতে যাওয়ার ঘটনা তাঁর পদমর্যাদা এবং ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করে। বিশ্বভারতীর স্থানীয় এবং দিল্লির প্রধানমন্ত্রীর দফতর ঘটনাটিকে সহজভাবে নিতে পারেনি। রবীন্দ্রানুরাগী নেহেরু নিজেও রথীন্দ্রনাথের বিষয়ে বিব্রত হন। প্রশান্ত মহালনবীশকে দিয়ে তাঁর কাছে খবর পাঠানো হলো যে, ‘বার্তা’র সারমর্ম হলো, চট্টোপাধ্যায় দম্পতিকে শান্তিনিকেতন থেকে হটাও। রথীন্দ্রনাথ উল্লিখিত ‘বার্তা’র মর্মার্থ গ্রহণ না করে বেছে নিলেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। অভিমান করে ছেড়ে এলেন শান্তিনিকেতন। সঙ্গে এলেন মীরা চট্টোপাধ্যায়। জীবনের শেষ আট বছর অতিবাহিত করেছেন এই নারীর সান্নিধ্যে – দেরাদুনে। এই ঘটনাক্রম বিশ্বভারতীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছে কমবেশি জানা।