বইয়ের হাট - এমরান হোসেন রাসেল



অনলাইন যোগাযোগের যুগান্তকারী পরিবর্তনে বইয়ের প্রসার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে  এই পাঠযজ্ঞে বাংলা বই যেন ব্রাত্যএকদল বাংলা বইপ্রেমী অনলাইন বাংলা বই পঠন-পাঠনে বিপ্লব সাধন করেছে ২০১২ সালে ‘বইয়ের হাট’-এর যাত্রা শুরু আজ সারা বিশ্বে ১২০,০০০ বইপ্রেমী এর সদস্য ৬০,০০০-এর বেশি বই অনলাইনে সেই চমকপ্রদ গল্প শুনুন অন্যতম পরিচালক এমরান হোসেন রাসেল-এর কাছে



বইয়ের হাট

এমরান হোসেন রাসেল

আমরা বলি ‘বই পড়লেই মানুষ মননশীল হয়’ বলা উচিৎ ‘মননশীল বই পড়লে মানুষ মননশীল হতে পারে’বইয়ের হাট হলো এমনই মননশীল বইয়ের আধার। শুধুমাত্র বাংলায় মননশীল বইয়ের আধার।
আজ মানুষ কংক্রিটময় পৃথিবীতে যান্ত্রিকতা, হিংসা, ঈর্ষায়, স্বার্থপরতায় কাতর, জীবন-দর্শন এখন স্বার্থ আর ধর্ষণে, সাম্রাজ্যবাদ রাষ্ট্রীয় আঙ্গিনা পেরিয়ে গ্রাম্য কুটিরে, ধর্মগুলো আত্মোন্নয়নের খোলস ছেড়ে অপরাধের বর্ম তখন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে মননশীল হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

যখন রাষ্ট্রনায়কের হীন স্বার্থে ফরমায়েশি অছিয়তনামা হয় ইতিহাস, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে বলা হয় উন্নয়ন, কোমলমতি শিশু-কিশোরদের কলহাস্য-কৈশোর ধর্মীয় উন্মাদনায় বা টিকে থাকার অসম প্রতিযোগিতায় ধ্বংস হয়, প্রকৃতির উদার উপহার সবুজ বনানি কেটে তৈরী হয় পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ঘরের বাইরে বের হলে ঘরে-ফেরা অনিশ্চিত তখন মানুষকে মানবিক হতে হলে মননশীল হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

সাহিত্য মানুষকে ভেতর থেকে গড়ে তোলে, এটাই সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য; মানব মনের ভেতরে প্রণোদনার সৃষ্টি করে। ‘সবকিছুর পরেও যে জীবন অমূল্য জিনিস’ এই বোধ জন্মাতে, জন্মানো বোধে শান দিতেই সাহিত্য।
জগতের ছড়িয়ে থাকা ইন্টারনেট-সেবী বাঙালি আর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা বাংলা বইয়ের মেলবন্ধন বইয়ের হাটসাহিত্য নিয়েই বইয়ের হাট-এর যাবতীয় কর্মকাণ্ড; নির্দিষ্ট করে বললে ভিন্ন-ভাষার সাহিত্য বাংলায় অনূদিত এবং বাংলা-সাহিত্যের আধারই বইয়ের হাটসাহিত্য বুঝতে হলে বিজ্ঞান, অংক, দর্শন, সংগীত, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, পুরাণ, মিথের উপযোগিতা অপরিহার্য, বইয়ের হাট-এ এসব বিষয়ভিত্তিক বইয়ের চর্চা হলেও সাহিত্যই প্রধান। মূলত বই দেওয়া-নেওয়া দিয়ে শুরু হলেও, বইয়ের হাট এখন সাহিত্য-নির্ভর আরও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত।

কথা সাহিত্য নিয়ে আড্ডায় স্মরণজিৎ চক্রবর্তী এবং প্রচেত গুপ্ত


কথা সাহিত্য নিয়ে আড্ডায় স্মরণজিৎ চক্রবর্তী এবং প্রচেত গুপ্ত


একজনের পছন্দ ছোটগল্প, অন্যজন ভালবাসেন উপন্যাসের বৃহৎ পরিসর। তবু নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে পাঠকমন স্পর্শ করতে পেরেছেন প্রচেত গুপ্ত এবং স্মরণজিৎ চক্রবর্তী, এই দুই গদ্যকারই। তাঁদের আড্ডায় সূত্র ধরিয়ে দিলেন সুবর্ণ বসু।

দেশ পত্রিকার আয়োজনে মুখোমুখি হলেন এইসময়ের দুই জনপ্রিয় গদ্যলেখক। জনপ্রিয়তার ভাল-মন্দ, লেখালিখির অভিযাত্রা, লেখায় অগ্রজ লেখকদের প্রভাব থেকে শুরু করে বহু বিষয় উঠে এল তাঁদের কথোপকথনে। সমসাময়িক লেখালিখি নিয়ে কোথাও হয়তো একটু সাবধানী, আবার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের প্রতি ঈষৎ বিরক্তি... মনের কথা লুকোলেন না কেউই। আবার লেখায় রসবোধ বা পাঠকের প্রতি বিশ্বাসের দিক থেকেও পরস্পরের সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পেলেন এঁরা...
সুবর্ণ বসু: বই বিক্রি হওয়াকে যদি জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ মাপকাঠি ধরি, তা হলে আপনারা এই মুহুর্তের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকদের অন্যতম। আপনাদের দুজনকেই জিজ্ঞেস করব, জনপ্রিয় লেখকরা কি লেখার সময় পাঠকের প্রতিক্রিয়া মাথায় রেখে লেখেন? নিজস্ব গল্প বলার পাশাপাশি পাঠকের আগ্রহ জিইয়ে রাখার যোগবিয়োগও কি চলতে থাকে?

প্রমীলার প্রতীক্ষা - গােলাম মুরশিদ


প্রমীলার প্রতীক্ষা
গােলাম মুরশিদ


পােশাকী নাম আশালতা সেনগুপ্ত। ডাকনাম দোলেনা/দোলন। বড়ােরা আরও সংক্ষেপ করে ডাকেন দুলি। কিন্তু বাঙালি সমাজে তাঁর প্রধান—ভুল বললাম—তাঁর একমাত্র পরিচয় তিনি নজরুল ইসলামের স্ত্রী-প্রমীলা। নিশ্চয় হাসতে জানতেন তিনি, হাসতেনও; কিন্তু তাঁর যে-কটি ছবি দেখা যায়, তার কোনােটিতে তার মুখে হাসি তাে দূরের কথা, হাসির রেখাটি পর্যন্ত দেখা যায় না। ছবি তােলার মুহূর্তে অনেকে আড়ষ্ট হয়ে যান। হয়তাে তিনিও তাই হতেন। তবে তাঁর ছবির সঙ্গে তাঁর জীবনেরও একটা আশ্চর্য মিল রয়েছে। ছবির বিষন্ন প্রমীলা, বাস্তব জীবনেরও আমৃত্যু দুখিনী।

তিনি তাঁর পিতার দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান। তাঁর কোনাে সৎ ভাইবােন ছিলাে কিনা, জানা যায় না। কিন্তু তার মায়ের তিনি ছিলেন একমাত্র সন্তান। তাঁর পিতাকে তিনি হারান তাঁর বাল্যকালে। কাকার সংসারে আশ্রয় পেয়ে সেই সংসারেই বড়াে হচ্ছিলেন। লেখাপড়ায় ভালাে ছিলেন। বড়াে হয়ে কয়েকটা কবিতা লিখেছিলেন এবং সেগুলাে প্রকাশিত হয়েছিলাে। তা ছাড়া, কুমিল্লায় যখন রাজনৈতিক মিছিল বেরিয়েছে, তখন কিশােরী দুলি তাতেও অংশ নিয়েছেন বলে জানা যায়। গান জানতেন, গান গাইতেন। তবে সর্বজন-সমক্ষে গাইতেন কিনা, তার প্রমাণ মেলে না।

নজরুলের জীবন যেখানে চাঁছাছোলা - পবিত্র সরকার

নজরুলের জীবন যেখানে চাঁছাছোলা

পবিত্র সরকার




চিন্তক, গবেষক, জীবনীকার গোলাম মুরশিদ উভয় বাংলাতেই সুপরিচিত, সম্মানিত। তিরিশটি মূল্যবান গ্রন্থের প্রণেতা। মাইকেল মধুসূদনকে নিয়ে তাঁর ‘‌আশার ছলনে ভুলি’ গ্রন্থটি বাংলা জীবনী‌সাহিত্যে একটি মাইলফলক। তাঁর নতুন গ্রন্থ ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত, নজরুল-জীবনী’ বাংলা জীবনী‌সাহিত্যের মুকুটে আরও একটি উজ্জ্বল পালক। দীর্ঘ গবেষণার ফসল। এই গ্রন্থে নজরুলকে পাওয়া গেল তাঁর সত্যিকারের স্বরূপে। ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মদিবস উপলক্ষে গ্রন্থটি নিয়ে এবং নজরুল ইসলামকে নিয়ে আলোচনা করলেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার।


বাঙালির সাহিত্য-সংস্কৃতির একনিষ্ঠ গবেষক গোলাম মুরশিদের সম্প্রতি প্রকাশিত নজরুল জীবনী (‘বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত’, প্রথমা, ঢাকা, ৮০০ টাকা) পড়তে পড়তে মনে হল, নজরুল আমাদের প্রিয় কবি, হয়তো রবীন্দ্রনাথের পরেই তাঁর কবিতা আমরা বেশি করে পড়ি, মুখস্থ করি, আবৃত্তি করি, এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের পরে তাঁরই গান আমরা বেশি করে গাই (এ কথাও অনেকে জানি যে, রবীন্দ্রনাথের গানের চেয়ে তাঁর গানের সংখ্যা প্রায় হাজারখানেক বেশি), কিন্তু তাঁকে নিয়ে বাঙালির নানারকম সঙ্কট আছে, তিনি আমাদের কাছে অনেকগুলি প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে রেখে গেছেন। তাঁর উত্থান ও প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন, তাঁর জীবন নিয়ে প্রশ্ন, তাঁর আত্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন, তাঁর সৃষ্টি-অভিমুখের বিবর্তন ও তাঁর সৃষ্টি-উৎস হঠাৎ রুদ্ধ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন। তিনি বাঁচলেন প্রায় সাতাত্তর বছর, কিন্তু শেষ পঁচিশ বছর বেঁচে রইলেন প্রায় উদ্ভিদের মতো, অসহায়, অন্যনির্ভর এক অস্তিত্ব। তিনি দেশকে আর নতুন কিছু দিতে পারলেন না ওই পঁচিশ বছর, যা দিয়েছেন সেই অমূল্য দানের জন্য কৃতজ্ঞতা হিসেবেই উপমহাদেশের বঙ্গভাষী অঞ্চল তাঁকে লালন ও পূজা করল, যেমন করে বিশেষ বিশেষ ধর্মগোষ্ঠীর মানুষ মূর্তিকে পূজা দেয়।
প্রকাশক : রিটন খান, সম্পাদকমন্ডলী : এমরান হোসেন রাসেল, রিটন খান
Copyright © 2020. All rights reserved by বইয়ের হাট