কলকাতায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উন্মাতাল দিনরাত্রির সঙ্গী ছিলেন বেলাল চৌধুরী। দুজনের মধ্যে ছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। আত্মজীবনী অর্ধেক জীবনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন সুনীল। এ লেখায় পাওয়া যাবে সুনীলের চোখে বেলালের অবয়ব।
বন্ধুদের দলে সাবলীলভাবে মিশে থাকা সম্পূর্ণ অচেনা একজনকে দেখলাম, তার নাম বেলাল চৌধুরী। সম্পূর্ণ মেদহীন সুগঠিত শরীর, ফরসা রং, নিষ্পাপ, সুকুমার মুখখানিতে ঈষৎ মঙ্গোলীয় ছাপ। এই নিরীহ যুবকটি সম্পর্কে অনেক রোমহর্ষক কাহিনি (হয়তো পুরোটা সত্যি নয়, সব রোমহর্ষক কাহিনিই তো সত্যি-মিথ্যে-গুজব মিশ্রিত হয়ে থাকে) শোনা গেল। তার বাড়ি পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানে, পেশা কুমির ধরা। একটা কুমির-শিকারি জাহাজে অনেক সাগর-উপসাগর পাড়ি দিতে দিতে সে হঠাৎ খিদিরপুরে এসে জাহাজ থেকে নেমে পড়েছে এবং পাসপোর্টটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে মিশে গেছে কলকাতার জনারণ্যে। এবং সে একজন কবি, তাই জল যেমন জলকে টানে, সেইভাবে সে যুক্ত হয়ে গেছে কফি হাউসের কবির দঙ্গলে। পাকিস্তানের সঙ্গে তখন ভারতের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে দিনকে দিন, কয়েক মাস পরেই শুরু হবে একটি বালখিল্যসুলভ যুদ্ধ, সে রকম আবহাওয়ায় পাকিস্তানের নাগরিক হয়েও সহায়সম্বলহীন অবস্থায় কলকাতায় বিচরণ করার জন্য প্রচণ্ড মনের জোর ও সাহসের দরকার। অবশ্য বেলালের একটা দারুণ সম্পদ ছিল, সেটা তার মুখের হাসি এবং সহজ আন্তরিকতায় মানুষকে আপন করে নেবার ক্ষমতা। পরে অনেকবার দেখেছি, যেকোনো বাড়িতে গেলে সে পরিবারের বাচ্চা ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে বুড়ো-বুড়িরা পর্যন্ত কিছুক্ষণের মধ্যেই বেলালকে ভালোবেসে ফেলে। এর মধ্যে সে কমলদারও খুব চেলা হয়ে গেছে, দুজন অসমবয়সী মানুষের এমন গাঢ় বন্ধুত্বও দুর্লভ।






