রাশিয়া ভ্রমণ
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মস্কো বিমানবন্দরে পা দিলুম খুব ভোরবেলায়। সারা রাত প্রায় জেগেই কাটাতে হয়েছে। কলকাতা থেকে এরোফ্লোট বিমানে চেপেছিলুম বিকেলবেলা, তারপর বোম্বে, করাচি আর তাসকেন্টে বিমানটি মাটি ছুঁয়েছিল, আমাদেরও নামতে হয়েছিল দুবার। তার মধ্যে শেষ রাতে তাসকেন্টে নেমে আমি ঝোলা থেকে একটা সোয়েটার বার করে পরে নিয়েছিলুম। রাশিয়ার ঠান্ডা সম্পর্কে অনেকেই ভয় দেখিয়েছিল আগে থেকে, কিন্তু আমি খুব একটা শীত-কাতুরে নই, তা ছাড়া কিছুদিন আগেই ডিসেম্বর-জানুয়ারির ক্যানাডার তুষারের রাজ্য ঘুরে এসেছি, সুতরাং মে মাসের রাশিয়াকে ডরাব কেন? অবশ্য সঙ্গে একটা পাতলা ওভারকোটও এনেছি।
বিমানে রাত্তিরটা বেশ গল্প-গুজবেই কেটে গেছে। সহযাত্রী পেয়েছিলুম দুই বাঙালি তরুণকে। একজনের নাম সুবোধ রায়, সে মস্কোতে আছে প্রায় সাত-আট বছর, উচ্চশিক্ষার্থে। কিছুদিনের জন্য কলকাতায় ছুটি কাটিয়ে ফিরে যাচ্ছে আবার। সুবোধ খুব দিলদরিয়া ধরনের, উচ্ছ্বাসপ্রবণ এবং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। অন্যজনের নাম অসিতবরণ দে, সে প্রায় চোদ্দো বছর বাদে চেকোশ্লোভাকিয়া থেকে কলকাতা-দর্শনে এসেছিল। সে একটু চাপা ও লাজুক স্বভাবের। আমরা তিনজনে মিলে মস্কো-প্রাহা-কলকাতার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আড্ডা দিয়ে যাচ্ছিলুম। সন্ধে থেকে মাঝেমধ্যেই আমাদের খাদ্য-পানীয় পরিবেশন করা হচ্ছিল, বিমানযাত্রার একঘেয়েমি কাটাবার জন্যই বোধহয় ওরা অত ঘন ঘন খাবার দেয়, কিন্তু অত কি খাওয়া যায়? শেষবারের খাবার আমি প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হয়েছিলুম।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মস্কো বিমানবন্দরে পা দিলুম খুব ভোরবেলায়। সারা রাত প্রায় জেগেই কাটাতে হয়েছে। কলকাতা থেকে এরোফ্লোট বিমানে চেপেছিলুম বিকেলবেলা, তারপর বোম্বে, করাচি আর তাসকেন্টে বিমানটি মাটি ছুঁয়েছিল, আমাদেরও নামতে হয়েছিল দুবার। তার মধ্যে শেষ রাতে তাসকেন্টে নেমে আমি ঝোলা থেকে একটা সোয়েটার বার করে পরে নিয়েছিলুম। রাশিয়ার ঠান্ডা সম্পর্কে অনেকেই ভয় দেখিয়েছিল আগে থেকে, কিন্তু আমি খুব একটা শীত-কাতুরে নই, তা ছাড়া কিছুদিন আগেই ডিসেম্বর-জানুয়ারির ক্যানাডার তুষারের রাজ্য ঘুরে এসেছি, সুতরাং মে মাসের রাশিয়াকে ডরাব কেন? অবশ্য সঙ্গে একটা পাতলা ওভারকোটও এনেছি।
বিমানে রাত্তিরটা বেশ গল্প-গুজবেই কেটে গেছে। সহযাত্রী পেয়েছিলুম দুই বাঙালি তরুণকে। একজনের নাম সুবোধ রায়, সে মস্কোতে আছে প্রায় সাত-আট বছর, উচ্চশিক্ষার্থে। কিছুদিনের জন্য কলকাতায় ছুটি কাটিয়ে ফিরে যাচ্ছে আবার। সুবোধ খুব দিলদরিয়া ধরনের, উচ্ছ্বাসপ্রবণ এবং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। অন্যজনের নাম অসিতবরণ দে, সে প্রায় চোদ্দো বছর বাদে চেকোশ্লোভাকিয়া থেকে কলকাতা-দর্শনে এসেছিল। সে একটু চাপা ও লাজুক স্বভাবের। আমরা তিনজনে মিলে মস্কো-প্রাহা-কলকাতার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আড্ডা দিয়ে যাচ্ছিলুম। সন্ধে থেকে মাঝেমধ্যেই আমাদের খাদ্য-পানীয় পরিবেশন করা হচ্ছিল, বিমানযাত্রার একঘেয়েমি কাটাবার জন্যই বোধহয় ওরা অত ঘন ঘন খাবার দেয়, কিন্তু অত কি খাওয়া যায়? শেষবারের খাবার আমি প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হয়েছিলুম।