অসুরের দেশ - সুকুমার রায়।

অসুরের দেশ
সুকুমার রায়

যে-জাতি শিল্পে বাণিজ্যে বেশ অগ্রসর, যাহারা লেখাপড়ার চর্চা করে, হিসাব করিয়া পাকা দালান ইমারৎ গাঁথিতে জানে এবং নানারূপ ধাতু ও অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহারে বেশ অভ্যস্ত, মোটের উপর তাহাকে সভ্য জাতি বলা যায়। ইতিহাসের প্রাচীন যুগে যে সকল সভ্য জাতির নাম পাওয়া যায় তাহার মধ্যে একটা জাতির কথা শুনি যাহার নাম অসুর বা আশুর। ইংরাজিতে তাহাকে বলে আসিরিয়া (Assyria)। এই অসুর দেশের নাম প্রাচীন বাইবেল প্রভৃতি পুরাতন পুঁথিতে অনেক স্থানে পাওয়া যায় এবং একশত বৎসর আগে এই দেশের সঙ্গে মানুষের এইটুকু মাত্র পরিচয় ছিল। মানুষ অসুরের দেশ ও তাহার রাজধানী নিনেভের কাহিনী কেবল পুঁথিতেই পড়িয়া আসিত কিন্তু তাহার চেহারা কেহ চোখে দেখে নাই। কারণ, যেখানে সহর ছিল সে স্থানে খোঁজ করিতে গেলে কেবল মাটির ঢিপি আর প্রকাণ্ড ময়দান ছাড়া আর কিছুই দেখা যাইত না।

উপন্যাস ‘ঘাচার ঘোচার’ - বিবেক শানবাগ | অনুবাদ: আশফাক স্বপন


বড়মাপের এক ভারতীয় উপন্যাস এলো মার্কিন দেশে
পারুল সায়গাল/নিউ ইয়র্ক টাইমস
অনুবাদ আশফাক স্বপন


বিপদ হলো পিঁপড়ার মতো – কদাচিৎ সে একা চলে। ভারতীয় লেখক বিবেক শানবাগের সংক্ষিপ্ত উপন্যাস ‘ঘাচার ঘোচার’-এ (শ্রীনাথ পেরুর-এর অনুবাদ) আমরা প্রত্যক্ষ করি একটি পরিবার কীভাবে বিপদ আর পিঁপড়া দুটোরই আক্রমণে জর্জরিত হয়ে প্রতিরোধের নানা নির্মম উপায় উদ্ভাবন করে। হঠাৎ লব্ধ ধনসম্পদ তাদের নিষ্ঠুরতা আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দেয়। কাহিনীর মূল চরিত্র, যার জবানীতে আমরা গল্পটা পড়ি, আমাদের জানায়: ‘লোকে ঠিকই বলে – আমরা অর্থ নিয়ন্ত্রণ করি না, অর্থই আমাদের চালায় ।‘ তবে তার বোধোদয় খানিকটা দেরিতে ঘটে। ‘টাকা-পয়সা যখন পরিমাণে অল্প হয়, তখন সে স্বভাবে মিতচারী। যেই ফুলে ফেঁপে বেড়ে ওঠে, ওমনি উদ্ধত হয়ে ওঠে, আমাদের নিজের খুশিমতো চালায়। এই অর্থই আমাদের এক ঝাপটায় তুলে এনে ঘুর্ণিঝড়ের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলেছে।‘

কখনও কারও সমালোচনা না করার দুর্লভ গুণ ছিল - সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়



শ্যামল মিত্রকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

এখন স্মৃতির সঙ্গে বিস্মৃতিও মিশে যায়৷ তাই ঠিক মনে করতে পারছি না, ঠিক কবে, কোথায় শ্যামলবাবুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল৷ একই সময়ের শিল্পী ও প্রিয়জন ছিলেন বলেই নয়, সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত-পরিচালক শ্যামল মিত্রকে ভুলে যাওয়া কখনও সম্ভব নয়৷ সঙ্গীত-পরিচালক এবং সুরকার হিসেবে তিনি সফল তো বটেই, কিন্তু শিল্পী হিসেবে আরও অনেক বেশি সাফল্য পেয়েছেন বলে মনে করি৷ তাঁর পুরুষালি, সুরেলা ও দরদ-ভরা কণ্ঠের গান একেবারে মনের ভেতরে গিয়ে নাড়া দেয়৷

খুবই জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন৷ কিন্তু গায়ক হিসেবে পাওয়া সাফল্য তাঁকে কখনও অহঙ্কারী করেনি৷ তাঁর বিনয় ছিল একেবারে স্বভাবসুলভ৷ আরও একটা বিশেষ ও দুর্লভ গুণ ছিল, কখনও কারও সমালোচনা করতেন না৷ একই সময়ের শিল্পী হিসেবে বাংলা ছায়াছবিতে আমরা বেশ কিছু গান করেছি৷ সেই স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে৷ শ্যামলবাবুর সুরে আমি ছায়াছবির গান যেমন করেছি, তেমন ওঁর সুরে বেশ কিছু বেসিক রেকর্ডও করেছি৷ নিজের গানের প্রশংসা নিজেই করা অস্বস্তির, কিন্তু এটা নির্ভেজাল সত্য যে আজও, এত বছর পরেও, সঙ্গীতানুষ্ঠানে শ্রোতাদের অনুরোধে সেই গানগুলো গাইতে হয়৷ গুণী ও যত্নশীল সুরকার ছিলেন৷ পঞ্চাশের দশকে এবং তার পরবর্তী সময়েও ওঁর সুরে অন্য শিল্পীদের গাওয়া গান আজও আমার পছন্দের তালিকায় থেকে গেছে৷ এখনও গানগুলো শুনলে ভাল লাগে৷

সৃষ্টিশীলতার স্বরূপ অন্বেষণ - জেমস বল্ডউইন | অনুবাদ - আশফাক স্বপন

সৃষ্টিশীলতার স্বরূপ অন্বেষণ - জেমস বল্ডউইন
অনুবাদ - আশফাক স্বপন



ইতিহাস বলে শিল্পীদের জীবদ্দশায় শুধু গালমন্দ জোটে, তারপর যখন তারা দেহত্যাগ করে চিরবিদায় নিয়ে সকল সামাজিক উদ্বেগের অবসান ঘটায়, শুধু তখনই প্রশংসা কুড়ায়।

 বেশির ভাগ মানুষ একাকীত্ব এড়াতে চায় – কিন্তু একাকীত্বের সক্রিয় সাধনাই একজন শিল্পীর মৌলিক লক্ষণ। সম্ভবত আর সব মানুষের সাথে এখানেই তার বড় তফাৎ। বিপন্ন অবস্থায় সব মানুষই যে আসলে একা, এই কথাটা বহুব্যবহারে অর্থহীন গতানুগতিক আপ্তবাক্যে পর্যবসিত হয়েছে। কারণ কথাটা আমরা মুখে খুব বলি, কিন্তু চাক্ষুস প্রমাণ উপস্থিত করার পরও খুব একটা মান্য করিনা। আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ আমাদের একাকীত্বের বাস্তবতা সম্বন্ধে খুব একটা চিন্তা করতে আগ্রহী নন, কারণ এবিষয়ে বেশি ভাবলে মানব সংসার স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে। অবশ্য একথা সত্যি যে সংসারে নানা অত্যাবশ্যকীয় কাজ – অপরিচ্ছন্ন জলাশয় পরিষ্কার, নগর স্থাপনা, খনিজ সম্পদ উদ্ধার, শিশুর আহারের ব্যবস্থা, ইত্যাদি– এসবের কোনটাই একা করা সম্ভব  নয়। তবে বহির্জগতকে নিয়ন্ত্রণে আনাই মানুষের একমাত্র কাজ নয়। তার স্কন্ধে আরেকটি গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে – তাকে নিজ চেতনার দুর্ভেদ্য বুনো অন্তর্জগতটাকেও বুঝতে, জানতে হবে। শিল্পীর দায়িত্ব এই অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চল আলোকিত করা, এই বিশাল ঘন বনাঞ্চলে আত্মোপলব্ধির প্রশস্ত পথরচনা করা। কেন? যাতে আমাদের নানাবিধ কর্মকাণ্ডের যজ্ঞে আমরা আসল উদ্দেশ্যের কথাটা ভুলে না যাই। সেই উদ্দেশ্য হলো আমাদের এই পৃথিবীটাকে মানুষের বসবাসের জন্য আরেকটু সুন্দর, সহনীয় করে তোলা।
প্রকাশক : রিটন খান, সম্পাদকমন্ডলী : এমরান হোসেন রাসেল, রিটন খান
Copyright © 2020. All rights reserved by বইয়ের হাট